সিরাজগঞ্জের বেলকুচির রান্ধুনীবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পে হামলা,অস্ত্রসহ গুলি লুট ও ৪ পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার ২১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি তার বিচারকার্য। অপরদিকে ১৪ বছর আগে এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হলেও এখনও শেষ হয়নি স্বাক্ষ্য গ্রহন। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ১০৪ জন স্বাক্ষী রয়েছেন। তবে স্বাক্ষ্য গ্রহন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট জেবুন্নেছা (জেবা রহমান)। এদিকে আসামীদের মধ্যে মুকুল হোসেন,সাইদুল ইসলাম ও জয়নাল আবদীনের মৃত্যুবরণ করেছে। বাকি আসামীদের মধ্যে ৩৩ জন জামিনে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন ১০ জন। মামলাটি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
জানাগেছে,২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৪৬ জন আসামীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করার পর ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইন্দ্রজিত সাহা জানিয়েছেন,রান্ধুনীবাড়ি পুলিশ ক্যাম্প লুটের এ মামলা ২০০২ সালের। এ মামলার এজাহারে কোন আসামীর নাম ছিলো না। কিন্তু আদালতে দাখিলকৃত চার্জশীটে ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ইতোমধ্যে এ মামলার ৩ জন আসামীর মৃত্যু হয়েছে। এখনও যে আসামীরা রয়েছেন তাদের প্রায়ই বৃদ্ধ। তারা এ বিচার শেষ পর্যন্ত দেখতে পারবে কি না তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেবুন্নেছা (জেবা রহমান) বলেন,মামলাটি সতর্কতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। এ মামলাটি একটি আলোচিত মামলা। স্বাক্ষীদের সমন জারি করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৬ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে। তবে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যেন এ মামলার বিচার কাজ শেষ হয় সে ব্যাপারে সকল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য,২০০২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে ৫০/৬০ জনের একদল সর্বহারা পার্টির সদস্যরা চর মকিমপুর অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করে। প্রথমে তারা পুলিশ কনষ্টেবল জাহিদুল হককে গুলি করে ফেলে দেয় এবং চার পাশ থেকে এলোপাথারি ভাবে গুলি করতে থাকে। তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমরা আত্মসমার্পণ কর এবং তোমাদের হাতিয়ার ফেলে দাও। এসময় সুবেদার মোঃ আব্দুল হান্নান সর্বহারাদের গুলি করতে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ প্রদান করেন। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি গোলা গুলি। সর্বহারাদের গুলিতে হাবিলদার গোলজার হোসেন, কনষ্টেবল শ্রী সুশান্ত চাকমা, কনষ্টেবল সাদেকুল ইসলাম, কনষ্টেবল রেজাউল হক, কনষ্টেবল বাবুল হোসেন, কনষ্টেবল আনিছুর রহমান, কনষ্টেবল আব্দুল করিম গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সুযোগে সর্বহারা সদস্যরা আরআরএফ (অস্ত্রাগারে) প্রবেশ করে ৭টি এসএলআর ও ৭টি ম্যাগজিন, ১৪৪ রাউন্ড গুলি, দুটি রাইফেল, ১টি ম্যাগজিন ও ৩০ রাউন্ড গুলি লুট করে গুলি করতে করতে চলে যায়। পুলিশ সদস্যরা তাদের পিছু পিছু ধাওয়া করেও গ্রেফতার করতে পারেনি। সর্বহারাদের গুলিতে কনষ্টেবল শ্রী সুশান্ত চাকমা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় কনষ্টেবল জাহিদুল ইসলাম, সাদেকুল ইসলাম ও রেজাউল হকের মৃত্যু হয়। এঘটনায় ক্যাম্পের সুবেদার আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫০/৬০ জন সর্বহারা দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে বেলকুচি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে ৪৬ জনকে আসামী করে ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
আপনার মতামত লিখুন :