কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ৩নং পৌরওয়ার্ড কুঠিপাড়া এলাকায় স্থাপিত মডেল মসজিদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (ওজোপাডিকো)। প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিপরীতে ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকার হিসেবে সর্বশেষ মোট বকেয়া বিলের পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ ৯৩ হাজার ৭৮ টাকা এবং ভেড়ামারা মডেল মসজিদের এ বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিল বকেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। মিরপুর মডেল মসজিদ প্রথমদিকে তিনমাসের বিল পরিশোধ করলেও জুলাই/২০২৩ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল হয়েছে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। তবে দৌলতপুর মডেল মসজিদের শুরু থেকে অদ্যবধি কোন বিল পরিশোধ না করায় সেখানে বিল বকেয়া হয়েছে ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৭শ ১১ টাকা। প্রতিমাসে গড়ে প্রতিটি মসজিদে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৪হাজার ইউনিট হিসেবে প্রতিমাসে বিল আসছে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো।
সব মিলিয়ে কুষ্টিয়াসদর, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলপুর মডেল মসজিদ গুলোর বিদ্যুত বিলের বকেয়া দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৭১ হাজার৭ শত ৮৯ টাকা।
কিন্তু বিল পরিশোধের দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ। মসজিদ পরিচালনা কমিটি বা ইসলামিক ফাউন্ডেশন কেউই দায় নিতে চাননা। নির্মাণ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরে ২০২১ সালের আগষ্ট মাসের বিল পরিশোধের পর থেকে অদ্যবধি ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ব্যবহৃত বিদ্যুতের বকেয়া বিল আদায়ে জেলার উন্নয়ন সমন্বয় ও আইন শৃঙ্খলা কমিটিতে একাধিকবার উত্থাপিত হলেও সমস্যা সমাধানে কোন উদ্যোগ নেয়নি মডেল মসজিদ কমিটি। বিল পরিশোধের তাগাদা দিয়ে মসজিদ কমিটিকে একাধিক বারপত্র দিয়েও কোন ফল হয়নি বলে অভিযোগ ওজোপাডিকো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর। এ বিষয়ে মডেল মসজিদ কমিটির পদাধিকারবলে সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘সারাদেশেই মডেল মসজিদগুলোতে যেভাবে বকেয়া বিল পরিশোধে বরাদ্দ আসবে আমরাও সেভাবেই পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
ওজোপাডিকো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলে রাব্বি জানান, ‘কুষ্টিয়া সদর উপজেলা মডেল মসজিদের বকেয়া বিল পরিশোধের তাগাদা দিয়ে মসজিদ কমিটিকে একাধিকবার পত্র প্রেরণ করা হয়েছে, কিন্তু এ বিল পরিশোধের দায় নিচ্ছে না কেউ। নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। মসজিদ ধর্মীয় স্থাপনা হওয়ায় এরসংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনাটি একটা স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে উঠতে পারে সেজন্য সংযোগও আমরা বিচ্ছিন্ন করতে পারছিনা। অন্যদিকে বকেয়া বিদ্যুৎবিল আদায়ে ও সরকারি ভাবে আমাদের উপর চাপ রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ উভয় সংকটে পড়েছে’।
একই ভাবে কুষ্টিয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এস এম নাসির উদ্দীন জানান,’এবছরের শুরুতেই মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার মডেলমসজিদে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় পল্লীবিদ্যুৎ। মিরপুর মডেল মসজিদ প্রথমদিকে তিনমাসের বিল পরিশোধ করলেও জুলাই/২০২৩ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল হয়েছে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। তবে দৌলতপুর মডেল মসজিদের শুরু থেকে অদ্যবধি কোন বিল পরিশোধ না করায় সেখানে বিল বকেয়া হয়েছে ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৭শ ১১ টাকা। প্রতিমাসে গড়ে প্রতিটি মসজিদে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৪হাজার ইউনিট হিসেবে প্রতিমাসে বিল আসছে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো। বকেয়া এই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য বারংবার তাগাদা দিয়ে পত্র প্রেরণসহ মৌখিকভাবে যোগাযোগ করেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, কুষ্টিয়ার উপ পরিচালক মো: হেলাল উজজামান বলেন,‘দেশের সব মডেলমসজিদ কাম-ইসলামিক কালচারাল সেন্টারগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। কুষ্টিয়া সদরসহ অপর ৫টি উপজেলায় স্থাপিত মডেল মসজিদগুলোও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায়। সবগুলো মডেল মসজিদের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে গেছে। এজন্য বিদ্যুৎ বিভাগ বারংবার বিল পরিশোধের তাগাদা দিয়ে চিঠি দিচ্ছে। আমরাও বিল পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রনালয়ে লিখছি। মন্ত্রনালয় এখাতে টাকা বরাদ্দ দিলেই আমরা বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারবো। তবে ইতোমধ্যে এসংক্রান্ত একটা পরিপত্র জারি হয়েছে, এসব মডেল মসজিদগুলোর প্রতিটিতে ১শ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল সরকার পরিশোধ করবে। কিন্তু বাস্তবে এসব মডেল মসজিদগুলোতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে অনেক বেশি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মডেল মসজিদে প্রতিটায় ৮ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ৮টি এসি লাগানো আছে। এক্ষেত্রে মসজিদ সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি সজাগ হওয়া জরুরী নচেৎ এভাবে চলতে থাকলে হয়ত বিদ্যুৎ বিভাগও এক সময় বাধ্য হবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে’।
কুষ্টিয়া সদর মডেল মসজিদের সভাপতি সহকারী কমিশনার (ভুমি) দবির উদ্দিন বলেন,‘এসব মসজিদগুলোর মেইন্টেনেন্সের দায়িত্বে মূলত: ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ওনারাই ভালো বলতে পারবেন কিভাবে আর্থিক সংস্থান হচ্ছে। বকেয়া বিদ্যুৎবিল সম্পর্কে শুনেছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেটা জেনে বলতে পারবো’।
আপনার মতামত লিখুন :