যশোরে শার্শা উপজেলার ব্যবসায়ীরা পদ্মা সেতুকে ঘিরে নবযুগের প্রত্যাশায় চনমনে হয়ে উঠছেন।কৃষিপণ্য সরাসরি ঢাকায় বিক্রির আশা যেমন তারা দেখছেন তেমনি অন্যান্য পণ্য নির্বিঘ্নে নিয়ে আসার সুযোগ হবে বলে তাদের আশা।উপজেলার টেংরা গ্রামের কাশেম সরদার বলেন, তিনি প্রায় ৪০বছর ধরে ঢাকায় সবজি সরবরাহ করছেন। বিভিন্ন মাঠ থেকে পেঁপে, পটল, বেগুন, মরিচ, কপি, কুমড়া ট্রাকে করে প্রতিদিন ঢাকায় পাঠান তিনি।পদ্মা সেতু আমাদের জন্য যে কতটা আনন্দের ও গর্বের তা মুখে বলে বুঝানো যাবে না। আমরা যারা কাঁচামালের ব্যবসা করি, আমাদের জন্য অনেক সুবিধে হবে। সারাদিন মাঠ থেকে ট্রাকে কাঁচামাল লোড করে ভোরে ঢাকার বাজার ধরতে পারবো। ঘাটে বসে যে দুশ্চিন্তা হতো তা থেকে এবার রেহাই পাব।সপ্তায় কমপক্ষে ১০ ট্রাক সবজি ঢাকায় পাঠান বলে জানান বাগআঁচড়ার কাঁচামাল ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ফেরি পারের সময় অনেক সবজি পৌঁছানোর আগেই নষ্ট হয়ে যায়। তখন পুঁজি হারিয়ে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে টাটকা সবজি সময় মতো ঢাকার মার্কেটে পৌঁছে দিতে পারবো। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ও চট্রগ্রামের মার্কেটের ঢুকতে পারবো। এতে করে ভাল দাম পাব। লসের সম্ভবনা থাকবে না। সরাসরি ঢাকা থেকে মাল এনে বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন বেনাপোলের লালমিয়া সুপার মার্কেটের ‘আর ফ্যাশন কর্নারের’ মালিক তোফাজ্জেল হোসেন।তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের পথ চলা সহজ হবে। মালসামান আনার দুশ্চিন্তা দূর হবে। দিনের দিন মালামাল আনতে পাব।নাভারন বাজারের মুদি দোকানি জিন্নাত আলী পরিবেশকের কাছ থেকে মালপত্র নেন।জিন্নাত এ প্রতিবেদককে বলেন,পরিবেশকের লোকজন অর্ডার নিয়ে যায়, কিন্তু সময়মত মাল ডেলিভারি দিতে পারে না। তারা বলে, ফেরিঘাটে আটকা পড়েছে গাড়ি। এতে অনেক খরিদ্দার ফিরে যায়। আশা করছি পদ্মা সেতু চালু হলে এই সমস্যা থাকবে না। খুব তাড়াতাড়ি মাল পেয়ে যাব, ব্যবসা ভাল হবে।ঢাকায় গিয়ে পাইকারি বাজারে ঘুরে ঘুরে পোশাক কেনন নাভারন নিউমার্কেটের কাপড় বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম। মনিরুল বলেন, ঢাকায় পোশাক কেনার পর ট্রান্সপোর্টে বুকিং দিয়ে ফিরে আসি। এসব মাল পৌঁছাতে এমনিতেই তিন-চার দিন লাগে। আর ফেরিঘাটে বাগড়ায় পড়লে আরও বেশি সময় লাগে। পদ্মা সেতু চালু হলে এসব সমস্যা থাকবে না। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে বলে মনে করেন শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু। তিনি বলেন, আমাদের কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলের কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাজার তৈরি হবে। অনেক কম সময়ে এ অঞ্চলের কৃষিপণ্য ঢাকা-চট্রগ্রাম নেওয়া যাবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে। কৃষক, ভোক্তা ও ব্যবসায়ী সবাই লাভবান হবেন।২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সেতুর দুয়ার উন্মোচিত হতে চলেছে।
আপনার মতামত লিখুন :