যশোরের চৌগাছায় বাণিজ্যিকভাবে মেটে আলুর চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় একশো হেক্টর জমিতে মেটে আলুর চাষ হয়েছে। এ উপজেলায় আবহাওয়া মেটে আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় অধিক ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। ফলন ভাল হওয়ায় লাভবান হচ্ছে কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার নিচু এলাকা ছাড়া প্রায় সব এলাকায় কম বেশি মেটে আলুর চাষ হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় একশো হেক্টর জমি। কৃষকরা মূলত দেশিয় নানা জাতের মেটে আলুর চাষ করেন।
উপজেলার মির্জাপুর, জগদীশপুর, স্বর্পরাজপুর, তেঘরি, মুক্তদাহ, মাডুয়া, কয়ারপাড়া, লস্কর পুর, বেড়গোবিন্দপুর দিঘলসিংগা ও কান্দীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা ব্যাপকভাবে মেটে আলুর চাষ করেছেন। অধিকাংশ জমিতেই মাচায়(বান) চাষ করা হয়েছে। তবে এর জন্য নতুন করে কোনো মাচা তৈরি করতে হয়নি কৃষকের। মেটে আলু রোপণের আগে ওই জমিতে ঝিঙে কিংবা উচ্ছের মাচায় চাষ করেছেন। এসব ফসল উঠে যাওয়ার পর মেটে আলু সেই মাচায় উঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে প্রতিটি মাচায় মেটে আলুর সবুজ পাতা আর সাপের মত আঁকাবাকা লতা এক অপরুপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এটি গড় আলু, মেটে আলু, গুইচ্যা আলু, লেমা আলু, ধুসড়ী আলু, আলতাপাট, চুবড়ি আলু, হরিণপেলে, গাড়ললাদা, ছেয়ে, মাছরাঙ্গা, হাতিপায়া, মৌ প্রভৃতি নামে পরিচিতি লাভ করলেও মূলত এর ৪ থেকে ৫টির মত জাত আছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার জগদীশপুর গ্রামের মাঠে কথা হয় কৃষক মুজিবর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, প্রায় এক দশক ধরে এ অঞ্চলের কৃষকরা ফসলের জমিতে মেটে আলুর চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এ বছর তিনি ১ বিঘা জমিতে মেটে আলুর চাষ করেছেন। কৃষক মজিবরের মত ওই মাঠে রেজাউল করিম ১০ কাঠা, সেলিম রেজা ১০ কাঠা, জমশের আলী ১ বিঘা, গোলাম আলী ১০ কাঠা, আনিছুর রহমান ১৫ কাঠা, সুলতান হোসেন ১০ কাঠা জমিতে মেটে আলুর চাষ করেছেন। আরো পৃষ্ঠ পোষকতা পেলে এচাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তারা জানায়।
চাষিরা বলেন, বৈশাখ - জ্যৈষ্ঠ মাসে জমিতে মেটে আলুর বীজ রোপণ করতে হয়। ওই সময়ে জমিতে উচ্ছে কিংবা ঝিঙের চাষ থাকে। এই ফসল মরে যাওয়ার সাথে সাথে মেটে আলুর লতা মাচায় (বানে) উঠিয়ে দিতে হয়। কোন সার বা বিষ ছাড়াই শীতের শুরুতে আলু উঠতে শুরু করে। পোকা মাকড়ের উৎপাত কম সে কারণে কীটনাশক ব্যবহার করা লাগে না। বলা চলে বিনা খরচে ৫ থেকে ৬ মাসে কৃষক এই ফসলের টাকা হাতে পায়। ভালো ফলন হলে বিঘা প্রতি ১ থেকে দেড় লাখ টাকার আলু বিক্রি করা সম্ভব। আলু উঠে গেলে ওই জমিতে শীত কালিন ফসল চাষ করা হয় বলে তারা জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, মেটে আলু চাষে ব্যয় ও পরিশ্রম দুটোই অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে কম। সে কারণে দিন দিন কৃষকের কাছে মেটে আলুর চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আপনার মতামত লিখুন :