AlokitoBangla
  • ঢাকা শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০
banner
অপারেশনের নামে কিশোরের হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলার অভিযোগ

উল্লাপাড়ার কেয়া হসপিটাল যেন প্রতারণার ফাঁদ অভিজ্ঞ সার্জন পরিচয়ে অপারেশন করেন ডিএমএফ বাবুল হোসেন


FavIcon
চিফ রিপোর্টার,দৈনিক আলোকিত বাংলা:
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩, ০৭:০৬ পিএম
উল্লাপাড়ার কেয়া হসপিটাল যেন প্রতারণার ফাঁদ অভিজ্ঞ সার্জন পরিচয়ে অপারেশন করেন ডিএমএফ বাবুল হোসেন
উল্লাপাড়ার কেয়া হসপিটাল যেন প্রতারণার ফাঁদ অভিজ্ঞ সার্জন পরিচয়ে অপারেশন করেন ডিএমএফ বাবুল হোসেন

চিকিৎসা সেবার নামের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার শ্যামলীপাড়ায় অবস্থিত কেয়া হসপিটাল এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। এ প্রতিষ্ঠান প্রতারণার ফাঁদে ফেলে রোগী ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। বেঙ্গল হসপিটালের এক সময়ের কর্মচারি কেয়া হসপিটাল এন্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল ইসলামই খুলে বসেছেন প্রতারণার ফাঁদ।
সম্প্রতি সলঙ্গা থানার মানিকদিয়ারপাড়া এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে আমিরুল ইসলাম (১২)’র বাম হাতের কুনু আঙ্গুলটির গোড়া থেকে কেটে ফেলেন কেয়া হসপিটাল এন্ড কনসালটেশন সেন্টারের ডিএমএফ বাবুল হোসেন। ভুক্তভোগী পরিবার উল্লাপাড়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে ভ‚ল অপারেশনে আঙ্গুল কেটে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডিএমএফ বাবুল হোসেন। ফলে মানবিক সেবার নামে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা হচ্ছে কলঙ্কিত। সেই সঙ্গে এই পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্দোষ ও স্বনামধন্য চিকিৎসকরাও পড়ছেন নানা বিপাকে।
এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব অবৈধ, অনৈতিক ও প্রতারণামূলক কর্মকাÐ। এ নিয়ে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারীরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক অভিজ্ঞ এমবিবিএস চিকিৎসক ও অর্থোপেডিক্স সার্জন জানেনই না অথচ তাদের নাম ব্যবহার করে উল্লাপাড়ার কেয়া হসপিটাল এন্ড কনসালটেশন সেন্টারের বাহিরে বিভিন্ন সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দালালদের মাধ্যমে রোগী ভিড়িয়ে এনে ডিএমএফ বাবুল হোসেনকে সার্জন বানিয়ে বিভিন ধরণের অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সুচতুর হাসপাতালের ব্যবস্থা পরিচালক মাহবুবুল ইসলাম। এদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেক রোগী সর্বশান্ত হয়েছেন। আবার অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে পথে বসেছেন। সম্প্রতি গত ১৮ মে-২০২৩ইং তারিখ রাত ৯টার দিকে সলঙ্গা থানার মানিকদিয়ারপাড়া এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে আমিরুল ইসলামের বাম হাতের কুনু আঙ্গুলের মাথার অংশ কেটে গেলে তিনি তার ছেলেকে কেয়া হসপিটাল এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে নিয়ে যান। এ সময় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল ইসলাম অভিজ্ঞ সার্জন আছেন, এমন কথা বলে তিনি রোগীর স্বজনদের সাথে অর্থোপেডিক্স সার্জন হিসেবে ডিএমএফ বাবুল হোসেনকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং রোগীর স্বজনদের কোনকিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়ে ডিএমএফ বাবুল হোসেন রোগীকে সরাসরি দোতলার ওটি রুমে নিয়ে যান এবং ওই রোগীর বাম হাতের কুনু আঙ্গুলটির গোড়া থেকে কেটে ফেলে দ্রæত হাতটি ব্যাÐিস করে রোগী ও তার স্বজনদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় রোগীর স্বজনেরা আঙ্গুল কেটে ফেলার কারণ জানতে চাইলে তাদের সঙ্গে বাকবিতÐা হয়। এক পর্যায়ে  হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল ইসলামের নির্দেশে রোগী ও তার স্বজনদের হাসপাতাল থেকে বের করেন দেন ডিএমএফ বাবুল হোসেন ও হাসপাতালের কর্মচারীরা। এদিকে ভ‚ল অপারেশনের মাধ্যমে আঙ্গুল কেটে ফেলার ঘটনায় ন্যায় বিচার দাবী করে ভুক্তভোগী অসুস্থ্য কিশোরের পিতা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগ দায়েরের পর থেকেই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল ইসলাম।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বংকিররাট এলাকার হাজী মোজাম্মেল হকের ছেলে বাবুল হোসেন ঢাকা মিরপুর-১১ এলাকার সাইক মেডিকেল ইনন্সিটিউট থেকে ৪বছর মেয়াদী মেডিকেল সহকারী (ডিএমএফ)কোর্স করেছেন ২০১৬ সালে এবং বিএমডিসি থেকে ডিএমএফ হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছেন ১৭ সালে, যার নিবন্ধন নং-ডি২২২১৯। কিন্তু এই সনদধারী ব্যক্তি কোন প্রকার রুগীর শরীরে অস্ত্রপাচার করতে পারবেন না এবং তার নামের আগে ডাক্তারও লিখতে পারবেননা। তিনি একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের সহকারী বা সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করবেন। অথচ কেয়া হসপিটাল এন্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে অভিজ্ঞ সার্জন বানিয়ে তাকে দিয়ে রোগীদের অপারেশনের নামে প্রতারণা করছেন ও কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। তাদের প্রতারণার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। এ যেন দেখার কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের নিরব ভ‚মিকায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি এমন অভিযোগ শত শত ভুক্তভোগীদের।
এ বিষয়ে কেয়া হসপিটাল এন্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সেদিন রাতে আমি হাসপাতালে ছিলাম না। থানার মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। পরে হাসপাতালে গিয়ে বিস্তারিত শুনেছি। ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। তবে অর্থোপেডিক্স সার্জন না হয়েও ডিএমএফ বাবুল হোসেন কিভাবে হাতের অপারেশন করলো জানতে চাইলে তা তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
এ সময় ডিএমএফ বাবুল হোসেন হাসপাতালে আছেন কিনা জানতে চাইলে প্রথমে মাহবুবুল ইসলাম অস্বীকার করে বলেন, তিনি আজ ছুটিতে আছেন। তখন তার কাছ থেকেই বাবুল হোসেনের মোবাইল নাম্বার নিয়ে ফোন দিলে তিনি হাসপাতাল আছেন বলেই জানান। এ সময় তাকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল ইসলামের চেম্বারে ডাকা হলে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে চেম্বারে চলে আসেন এবং ভ‚ল অপারেশনের বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেন এবং অপারেশন করা ভ‚ল হয়েছে বলে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এছাড়াও ঘটনাটি সমাধানের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টাও করছেন বলে ডিএমএফ বাবুল হোসেন জানান।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি পেয়েছি।  মামলা রুজু করা হবে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দু’দিন সময় নিয়েছে। এর মধ্যে সমাধান না হলে মামলাটি রুজু করা হবে।

 

 

Banner
Side banner

সারাদেশ বিভাগের আরো খবর

Small Banner
Side banner