সিএনবিসির সোমবারের ‘স্ট্রিটস সাইন এশিয়া’তে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ আশা করে এসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্স (আসিয়ান) রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংস নিপীড়ন থেকে পালিয়ে এসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় খুঁজছিল রোহিঙ্গারা। এসব রোহিঙ্গা মুসলিমদের বোঝা বহন করছে বাংলাদেশ। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আশা করে, এসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে আসিয়ান। অনলাইন সিএনবিসি’তে প্রকাশিত রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে।এতে আরো বলা হয়, মিয়ানমারের পশ্চিমে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গারা নির্যাতিত। ১৯৭০ এর দশক থেকেই বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা অভিবাসী হিসেবে এসেছেন। কিন্তু ২০১৭ সালে বাণের পানির মতো দ্রুততম সময়ে এবং দলে দলে যেভাবে রোহিঙ্গা এসেছে, তেমনটা আগে কখনো ঘটেনি।এ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রায় ১১ লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছেন। তার ভাষায়, আমাদের অগ্রাধিকার হলো নির্যাতিত এসব রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে গিয়ে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে দেয়া উচিত।মানবিক দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ তাদেরকে নিয়ে এখন কঠিন অবস্থার মুখে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন আশা প্রকাশ করেন যে, আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের আসন্ন সম্মেলনে এসব শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। এখন যেহেতু ইন্দোনেশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে মিয়ানমার সরকারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, বিষয়টি একটি ভাল খবর। অন্ততপক্ষে সম্মেলনে যোগ দেয়া উচিত তাদের এবং হয়তো সেখানে তাদের ওপর আসিয়ান সদস্যরা চাপ প্রয়োগ করবে তাদের এসব লোকজনকে ফিরিয়ে নিতে।উল্লেখ্য, ১লা ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার এখন জরুরি অবস্থায় রয়েছে। সেখানে নির্বাচিত অং সান সুচির সরকারকে হটিয়ে দিয়েছে সামরিক জান্তা। এই জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংকে আগামী ২৪ শে এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সে উপলক্ষকে সামনে রেখে এসব মন্তব্য করেছেন আবদুল মোমেন। ১০ জাতির এই সংগঠন মিয়ানমারে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনের একটি উপায় খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে কমপক্ষে ৭০০ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে। সেখানে আটক করা হয়েছে কমপক্ষে তিন হাজার মানুষকে। এ অবস্থায় পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেছেন যে, মিয়ানমার হয়তো একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে। তাই সহিংসতা সমাধানে বড় শক্তিগুলোকে প্রচেষ্টা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।তবে মিয়ানমারের সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়ে কোনো অবস্থান নেননি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তার সরকার চায় মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক। তার ভাষায়, বাংলাদেশ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা আইন ব্যবস্থা সমুন্নত থাকুক এটা চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো সহিংসতাকে সমর্থন করে না। কারণ, তা থেকে আরো সহিংসতা এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়।
আপনার মতামত লিখুন :